আমদানি বা রপ্তানি (Export and Import license) লাইসেন্স কেন করতে হবে ?
আপনি যদি কোন পন্য অন্য দেশ থেকে নিজ দেশে আনতে বা আমদানি(Import) করতে চান তাহলে অবশ্যেই আপনাকে আমদানি (Import) লাইসেন্স নিতে হবে। একইভাবে নিজ দেশের বা কোম্পানীর পন্য দেশে পাঠাতে বা রপ্তানি (Export) করতে চান তাহলে অবশ্যেই আপনাকে রপ্তানি (Export লাইসেন্স নিতে হবে।
আমদানি বা রপ্তানি (Export and Import license) লাইসেন্স ফি কত?
রপ্তানি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি হচ্ছে ৭০০০ টাকা এর সাথে ১৫% ভ্যাট জমা দিতে হবে। আর যদি নবায়ন করতে চান, তাহলে অতিরিক্ত আরো ১০০০ টাকা জমা দিতে হবে।
উপরের মত এক্ষেত্রেও আপনাকে ১৫% ভ্যাট এবং নবায়ন করতে হলে অতিরিক্ত ১০০০ টাকা দিতে হবে।
.
কিভাবে আমদানি বা রপ্তানি (Export and Import license) লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হয়?
আমদানি বা রপ্তানি (Export and Import license) লাইসেন্স এর জন্য নিম্মোক্ত ধাপ অনুসরন করতে হয়;
প্রথম ধাপ: ব্যাংক এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা
আমদানি বা রপ্তানি যে লাইসেন্সই নিতে চান না কেন, তার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রথমে সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই এই টাকা ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। টাকা জমা দেওয়ার সময় কোড নং-১-১৭৩১-০০০১-১৮০১ খাতে জমা দিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে অনলাইনে আবেদন করা:
আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স নিতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের ওয়েবসাইটে থাকা নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া আপনাদের সুবিধার্থে কাজগুলি ধাপে ধাপে বর্ণনা করছি।
আবেদনের জন্য প্রথমেই আপনাকে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের অনলাইন লাইসেন্সিং মডিউলের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। ওয়েবসাইটে থাকা নিউ রেজিষ্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করে একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরী করতে হবে। অ্যাকাউন্ট তৈরী হয়ে গেলে আপনাকে লগইন করে আমদানি বা রপ্তানির জন্য নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে।
আবেদন ফরমে যে-সব তথ্য প্রদান করতে হয় সেগুলি হচ্ছে;
- পূর্ববর্তী লাইসেন্স থাকলে সেটির নম্বর ও মেয়াদকাল।
- কোম্পানীর নাম, ঠিকানা ও প্রতিষ্ঠানের ধরণ।
- কোম্পানীর ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন (টিআইএন) সার্টিফিকেট।
- ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
- কোম্পানীর মালিকের তথ্যাদি।
- পার্টনারশীপ বা লিমিটেড কোম্পানী হলে অংশীদার বা বোর্ড অব ডিরেক্টরের সদস্যদের তথ্য।
- ব্যবসাটির প্রতিনিধিত্বকারী ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন এর সদস্যপদের তথ্য।
- ট্রেজারী চালানের নম্বরসহ টাকার পরিমাণের তথ্য।
এসব তথ্য প্রদান করার পরবর্তীতে ফরমের একদম নীচের দিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংযুক্ত করতে হবে। সংযুক্ত করার জন্য কাগজগুলি সুন্দরভাবে স্ক্যানিং করে নিতে হবে। কোন কাগজ যদি একাধিক পৃষ্ঠার হয়ে থাকে, তাহলে সেটি অবশ্যই পিডিএফ ফরম্যাটে সেভ করতে হবে।
তৃতীয় ধাপ: আবেদন পত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া।
আগের ধাপে যে পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করেছিলেন, এবার সেটিকে প্রিন্ট করে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে দাখিল করতে হবে। আপনার যদি পূর্বে সার্টিফিকেট বা লাইসেন্স থেকে থাকে, তাহলে সেটিও একই সাথে জমা দিয়ে দিতে হবে। এ পর্যায়ে আপনার আবেদনটি অত্র দপ্তরে গৃহীত হয়েছে মর্মে পিডিএফ ফাইলের প্রিন্ট করা কপিটিতে সিলমোহর প্রদান করা হবে।
চতুর্থ ধাপ:
সিলমোহর সম্বলিত আবেদন পত্র আপলোড করা সিলমোহর সম্বলিত আবেদন পত্রটি এ পর্যায়ে আবার আপনাকে স্ক্যান করতে হবে এবং আপনার যে অ্যাকাউন্ট থেকে আবেদন করেছিলেন, সে অ্যাকাউন্টে লগইন করে আপলোড করে দিতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার ইমেইলে লাইসেন্সের অনলাইন কপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
তবে আপনার কাগজপত্র পর্যবেক্ষণকারী যদি কোন কাগজপত্রে কোন ধরনের ত্রুটি পান, তাহলে তিনি আবেদনটি সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে আপনাকে কি করতে হবে তার একটি নির্দেশিকা দিবেন। আপনি লগইন করে নির্দেশিকা অনুযায়ী কাগজ পুনরায় জমা দিয়ে রি-সাবমিট করলে তারপর আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হবে।
আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স বিতরণের কাজটি করে থাকে। উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়াগুলি সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারলে এবং আপনার প্রদত্ত সব তথ্যাদি নির্ভুল হলে উপরোক্ত দপ্তর আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে এই লাইসেন্স ইস্যু করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে এটি একটি নবায়নযোগ্য প্রক্রিয়া। তাই সবসময় লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই সেটি নবায়ন করে নেওয়া জরুরী।
এবার আসি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল পর্বে। তবে আগেই বলে রাখি চেষ্টা করবেন সবগুলি কাগজের মূল কপি স্ক্যানিং করে দাখিল করতে। তবে কোনটির যদি মূলটি দাখিল করতে না পারেন, তবে অবশ্যই সেক্ষেত্রে ওই কাগজের সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে।
Export-Import License (IRC-ERC) করতে
কি কি কাগজ-পত্র লাগবে?
(1). Up-to-Date Trade License
(2). Bank Solvency Certificate
(3). যে কোন চেম্বার অফ কমার্স বা Association এর Membership Certificate
(4)(a). প্রোপাইটরশীপ হইলে প্রোপাইটরের ছবি, ই-টিন এবং NID কার্ড।
(4)(b). যদি পার্টনারশীপ হয় তাহলে সকল পার্টনারের ছবি, ই-টিন,
NID কার্ড এবং পার্টনারশীপ ডীডের কপি, এবং RJSC সার্টিফিকেট।
(4)(c). যদি লিমিটেড কোম্পানী হয় তাহলে চেয়ারম্যান ও MD’র ছবি, ই-টিন,
NID কার্ড এবং কোম্পানীর ই-টিন, RJSC সার্টিফিকেট, Form-XII লাগবে।
(4)(d). যদি লিমিটেড কোম্পানীতে কোন বিদেশী শেয়ার হোল্ডার থাকে তাহলে
চেয়ারম্যান ও MD’র ছবি, ই-টিন, NID কার্ড এবং কোম্পানীর ই-টিন, RJSC সার্টিফিকেট,
Form-XII, কোম্পানীর এমপ্লই লিস্ট লাগবে। এছাড়া বিদেশী শেয়ার হোল্ডারের পাসপোর্ট,
ওয়ার্ক পারমিট এবং ছবি লাগবে। বিদেশী হলে উপরের ফি এর সাথে অতিরিক্ত
পনের হাজার টাকা খরচ হবে।
(4)(e). যদি শিল্প IRC হয় তাহলে বিনিয়োগ বোর্ড অথবা সংশ্লিষ্ট পোষকের অনুমতি পত্র
লাগবে
সকল তথ্যাদি ঠিকভাবে পূরণ করা ও প্রয়োজনীয় কাগজগুলি যথাযথভাবে সংযুক্ত করা হলে ফরমের একদম নিচে থাকা সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবদনটি দাখিল করুন। আবেদন দাখিল করা সফল হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড হবে। সেটি প্রিন্ট করে পরবর্তী কাজের জন্য সংরক্ষণ করুন।
প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: লাইসেন্স করতে সময় কতদিন লাগে?
উত্তর: সকল কাগজ-পত্র ঠিক থাকলে ৭ কার্যদিবস।
প্রশ্ন: Membership Certificate কি?
উত্তর: চেম্বার অফ কমার্স, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত এসোসিয়েশন এর মেম্বারশীপের সনদ। এক্ষেত্রে যে কোন এসোসিয়েশনের মেম্বার হলে আপনি যেকোনো পণ্য আমদানী বা রপ্তানি করতে পারবেন। যেমন: আপনি প্লাস্টিক এসোসিয়েশনের মেম্বারশীপ নিয়েছেন এবং এটা দিয়ে আমদানী বা রপ্তানি লাইসেন্স করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে চাইলে আপনি প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি ইলেকট্রিক পণ্যও বা অনুমোদিত যে কোন পণ্য আনতে পারবেন।
প্রশ্ন: Membership Certificate নিতে খরচ কত?
উত্তর: Membership Certificate নিতে খরচ নির্দিষ্ট নেই। চেম্বার অফ কমার্স বা এসোসিয়েশন সমূহের নিবন্ধন খরচ তাদের নিজস্বভাবে নির্ধারিত, যেমন: ইলেকট্রিক এসোসিয়েশনের মেম্বারশীপ ১০০০০/- টাকা, সময় লাগে প্রায় ১ মাস। আবার SME এর মেম্বারশীপ নিতে ৫০০০/- টাকা খরচ হয়, সময় লাগে একদিন মাত্র।
প্রশ্ন: ইমপোর্ট লাইসেন্স কত প্রকার?
উত্তর: সাধারণভাবে ইমপোর্ট লাইসেন্স ৩ প্রকার (১) বাণিজ্যিক (২) শিল্প এবং (৩) বহুজাতিক
(১) বাণিজ্যিক IRC: আমরা সাধারণত যে লাইসেন্সে পণ্য আমদানি করি তা বাণিজ্যিক IRC.
(২) শিল্প IRC: শিল্প IRC হচ্ছে তাদের জন্য যাদের ফ্যাক্টরি সেটআপ আছে এবং ক্যাপিটাল মেশিনারি আনতে হয়। এক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কম হয়। তবে শিল্প IRC বিনিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ প্রয়োজন হয় এবং এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া।
(৩) বহুজাতিক IRC: যদি কোন কোম্পানিতে কোন শেয়ার হোল্ডার বিদেশী থাকে তাহলে বহুজাতিক IRC এর জন্য আবেদন করতে হয়।
প্রশ্ন: লাইসেন্স নবায়ন করতে না পারলে কি হবে?
উত্তর: জরিমানা দিয়ে লাইসেন্স যে কোন সময় নবায়ন করা যাবে। জরিমানার হার : ১ম বছর ৫০০/-, ২য় বছর ১০০০/- তিন বছরের ঊর্ধ্বে ২০০০/- (এক্সপোর্ট তিন বছরের ঊর্ধ্বে ১৫০০/-)। এই জরিমানার উপর আবার ১৫% ভ্যাট জমা দিতে হবে।
প্রশ্ন : ইমপোর্ট লাইসেন্স দিয়ে কি পন্য রপ্তানি করা যাবে?
উত্তর: না। ইমপোর্ট লাইসেন্স দিয়ে শুধু পন্য আমদানি করা যাবে । ঠিক একইভাবে এক্সপোর্ট লাইসেন্স দিয়ে শুধু পন্য রপ্তানি করা যাবে। তাই পন্য আমদানি বা রপ্তানি করার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে Export-Import License নিতে হবে।