আইন কি ও কত প্রকার ও ‍উৎস

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বি:দ্র: নিম্মোক্ত আর্টিকেলটি bdlaws.com থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আইন কি?

আইন এক ধরণের আদেশ বা নিষেধ আরো সহজ ভাবে বলা যায়, নিয়মের একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে প্রধানত নাগরিক ব্যধ্যবাধকতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণসহ সামাজিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

আইনবিদ স্যামন্ড এর মতে- আইন হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রয়োগকৃত নীতিমালা।

জন অস্টিন আইনের সংজ্ঞা দিয়েছেন- আইন হল সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ।

তিনি তিনটি বিষয় তুলে ধরেছেন,

– the law is a command issued by the uncommanded commander_the sovereign;
-such commands are backed by threats of sanctions; and
– a sovereign is one who is habitually obeyed

আইন কত প্রকার:

আইনকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়

একটি দেশের আইনকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়
(১) সরকার সম্পর্কিত (Public Law) এবং
(২) ব্যাক্তি সম্পর্কিত  (Private Law)

(১) সরকার সম্পর্কিত

রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকারের গঠন,কার্যাবলি, ক্ষমতা, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন , সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব, ও কার্যাবলী এবং রাষ্টের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে তাকে সরকার সম্পর্কিত আইন বলে।

সরকার সম্পর্কিত আইনের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ রয়েছে :-

ক) সাংবিধানিক  (Constitutional ) এবং
খ) প্রশাসনিক  ( Administrative )

(ক) সাংবিধাািনক আইনঃ সাংবিধানিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বোঝায় যা রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকারের গঠন,কার্যাবলি, ক্ষমতা, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব, ও কার্যাবলী এবং রাষ্টের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

(খ) প্রশাসনিক আইনঃ প্রশাসনিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বুঝায় যা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের শুধুমাত্র প্রশাসনিক দিক নিয়ন্ত্রন করে এবং অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব, তাদের মাঝে ক্ষমতার বন্টণ, ব্যক্তি এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাঝে সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

(২) ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন :-

ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক নির্ধারণ করে অর্থাৎ নাগরিকের অধিকারগুলো রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে ব্যক্তি সম্পর্কিত আইন বলে। উদাহরণঃ Law of Contract, Law of Property, Law of Person ইত্যাদি ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন ।

ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন আবার দু’ ভাগে ভাগ করা যায় :-

(১) তত্ত্বগত আইন (Substantive Law ) এবং
(২) পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law)

১। তত্ত্বগত আইন: ব্যক্তির অধিকার সৃষ্টি করে বা সংজ্ঞায়িত করে তাকে তত্ত্বগত আইন বলে। যেমন- চুক্তি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ইত্যাদি।

২। পদ্ধতিগত আইন: অধিকারকে রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে পদ্ধতিগত আইন বলে। যেমন- দেওয়ানী কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি ইত্যাদি।

উদাহরণস্বরূপঃ কোন সম্পত্তিতে আমার অধিকার আছে কিনা তা তত্ত্বগত আইনের বিষয় কিন্তু কখন কোন আদালতে আমাকে মামলা করতে হবে তা নির্ধারণ করে পদ্ধতিগত আইন।

আইনের উৎপত্তি:-

পবিত্র কোরআন অনুসারে সার্বভৌমত্ব সর্বশক্তিমান আল্লাহর হাতে ন্যাস্ত এবং রাজা হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশ পালনকারী এক অনুগত দাস। শাসক ছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর পছন্দনীয় প্রতিনিধি এবং জিম্মাদার। সেই আলোকে আইনের উৎপত্তি বিভিন্ন উৎস থেকে হতে পারে।

আইনের উৎস :-

আইনের উৎপত্তি বিভিন্ন উৎস থেকে হতে পারে । তবে প্রধানত ৬ টি উৎস উল্লেখ করা হলো:

১. প্রথা, ২. ধর্ম, ৩. আইনবিদদের গ্রন্থ, ৪. বিচারকের রায়, ৫. ন্যায়বোধ, ৬. আইনসভা।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আইনের উৎস হতে পারে।

১. বিভিন্ন বিধি-বিধান সৃষ্টিকারী আন্তর্জাতিক কনভেনশন বা চুক্তি যা বিরোধপক্ষসমূহ কর্তৃক স্বীকৃত;

২. আন্তর্জাতিক প্রথা যা আইন হিসেবে সাধারণভাবে স্বীকৃত;

৩. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত;

৪. বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান পন্ডিত ব্যক্তিদের মতবাদ যা আইনের বিধান নির্ণয়ে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে সক্ষম।

৫. আইনের সাধারণ নীতিমালা যা সভ্য জাতিসমূহ কর্তৃক স্বীকৃত।

আইনের বৈশিষ্ট্য:-

আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ ও ক্রিয়াকলাপকে নিয়ন্ত্রন করে ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ হতে স্বীকৃত এবং আরোপিত। আইন হচ্ছে সর্বজনীন। সমাজে প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতি সকলের নিকট মান্য। এটি এক ধরনের আদেশ বা নিষেধ।

আইনের বৈশিষ্ট্য চারটি- যথাঃ-

১. আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া ।
২. আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া ।
৩. অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী না বলা।
৪. যে যতোটুকু অপরাধ করবে তাকে ততোটুকু শাস্তি দেওয়া।
আইনের এই চারটি বৈশিষ্ট্যকে Rules of Law বলা হয়।

আইন ও বিধি:-

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আইন অর্থ কোন আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোন প্রথা বা রীতি।

আইন আদালত:-

আইন প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন আদালত যেখানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নায্য অধকিার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয় । এই নায্য অধিকার ও ন্যায় বিচার করার জন্য আদালতে রয়েছে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিচারকবৃন্দ। তারা আইনের আলোকে আদালতে ন্যায় বিচার ও নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতে তাদের দায়িত্বে নিযুক্ত রয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়:-

বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র কাঠামো গঠন ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বিচার প্রশাসনের কল্যাণার্থে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।

বিভিন্ন আইনের ধারা :-

দন্ডবিধি , ১৮৬০ এই আইনে মোট ৫১১ টি ধারা রয়েছে। যে ধারাগুলোর আওতায় মানুষ হাজার হাজার অপরাধ করছেন কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা কোন অপরাধ কোন আইনের আওতায় কোন ধারার মধ্যে সম্পৃক্ত। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন ধারায় কোন অপরাধ করলে কি ধরণের সাজা রয়েছে।

দন্ডবিধির ধারা নম্বর- ১৪১ :- বেআইনী সমাবেশ পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমাবেশকে বেআইনী সমাবেশ বলা হয়। যদি কোন ব্যক্তি উক্ত সমাবেশে এই ধারার অধীন অপ্রিতিকর কোন দুরঘটনা ঘটান তাহলে যে সকল ব্যক্তি উক্ত বে-আইনী সমাবেশের সদস্য হবেন, সে সকল ব্যক্তি দন্ডবিধির ধারা নম্বর-১৪৩ অনুযাযী যে কোন বর্ণনায় সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে, যার মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

দন্ডবিধির ধারা নম্বর-১৯৩: মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার শাস্তি।

যে ব্যক্তি বিচার বিভাগীয় মামলার কোন পর্যায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বা কোন বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমের কোন পর্যায়ে ব্যবহৃত হওয়ার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরী করে, তাহলে সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পযন্ত হতে পারে এবং অর্থদন্ড সহ উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। এবং যে ব্যক্তি অন্য কোন মামলায় ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যাসাক্ষ্য দেয় বা উদ্ভাবন করে, সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে- যার মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে, দন্ডিত হবে এবং এতদ্ব্যতীত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।

দন্ডবিধির ধারা নম্বর-২১২: অপরাধীকে আশ্রয় দান করা।

যেক্ষেত্রে কোন অপরাধ সংঘটিত হয় , তাহলে , যে ব্যক্তি এরূপ কোন ব্যক্তিকে আইনত শাস্তি হতে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে আশ্রয় দান করে বা লুকিয়ে রাখে, যাকে সে অপরাধী বলে জানে বা অপরাধী বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ থাকে; সেক্ষেত্রে,
মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধের ক্ষেত্রে : যদি অপরাধটি মূত্যূদন্ডে দন্ডনীয় হয়, তাহলে সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে- যার মেয়াদ পাঁচ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে- দন্ডিত হবে এবং এতদ্ব্যতীত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে;
যাবজ্জীবন দন্ডনীয় হওয়ার ক্ষেত্রে : যদি অপরাধটি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় হয় বা কারাদন্ডে- যার মেয়াদ দশ বৎসর হতে পারে- দন্ডনীয় হয়, তাহলে সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে- যার মেয়াদ তিন বৎসর পর্যন্ত হতে পারে-দন্ডিত হবে এতদ্ব্যতীত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে।

দন্ডবিধির ধারা নম্বর-৩০২ঃ খুনের শাস্তি।

যদি কোন ব্যক্তি খুন করে, তাহলে সে ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং এতদ্বাতীত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে।

দন্ডবিধির ধারা নম্বর-৩০৩ঃ যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত ব্যক্তি কর্তৃক খুনের শাস্তি।

যদি কোন ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত অবস্থায় খুন সংঘটন করে, তাহলে সে ব্যক্তি মূত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে।

দন্ডবিধির ধারা নম্বর-৩৭৬ঃধর্ষণের শাস্তি।

যদি কোন ব্যক্তি , নারী ধর্ষণ করে, তাহলে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বা যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে- যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে- দন্ডিত হবে এবং এতদ্ব্যতীত অর্থদন্ডেও দন্ডিনীয় হবে, ধর্ষিত নারীটি তার নিজ স্ত্রী হলে এবং তার বয়স বার বছরের কম হলে শেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে- যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে অথবা অর্থদন্ডের বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত হবে ।

পরিশেষে বলা যায় যে, আইনের চোখে সকলেই সমান কেউ আইনের বাইরে নয় তাই দেশের সকল জনসাধারণের আইন সম্পর্কে যথেষ্ট্য জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Get 30% off your first purchase

X
error: Content is protected !!